দৈনিক আজকের পেপার

দৈনিক আজকের পেপার

বরিশালে ওসি’র বিরুদ্ধে ওসি’র অভিযোগ

অভিযোগকারী ওসি গোলাম সরোয়ার (বামে) ; অভিযুক্ত ওসি আজিমুল করিম (ডানে)

বাদীর সামনে বসে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার না করা, সময়ক্ষেপন করে একদিন পর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ধারা বাদ দিয়ে দায়সারাভাবে মামলা রেকর্ড করাসহ চারদিনেও আসামীদের গ্রেফতার করা হয়নি। ফলে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ছরোয়ার আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমি একজন কর্মরত ওসি হয়েও যখন আমার মেয়েকে নিরাপত্তা দিতে পারছিনা, সেখানে অন্যজনের মেয়েকে কিভাবে নিরাপত্তা দিবো।

সূত্রমতে, বরিশাল সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আগৈলঝাড়া থানার ওসি’র মেয়েকে দীর্ঘদিন থেকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো তার সহপাঠী সাবিকুন নাহার শশী। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শশী নগরীর কিশোর গ্যাংদের মাধ্যমে ওসি’র মেয়েকে বিভিন্নধরনের উত্যক্ত করে আসছিলো। বিষয়টি ওসি’র মেয়ে তার মায়ের কাছে জানানোর পর তিনি স্কুলের এক শিক্ষকের কাছে বিচার দেন। এতে শশী ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম হোতা নগরীর মতাসার এলাকার তাওসিফ মাহমুদ স্বাধীন ও আসাদ ইসলামসহ তাদের অন্যান্য সহযোগীদের দিয়ে ওসির মেয়েকে মারধরসহ শ্লীলতাহানী করে। এ ঘটনার পর নির্যাতিতা ছাত্রী একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্ঠা করেন। পারিবারিকভাবে তাকে চিকিৎসাও করানো হয়েছে।

ওসি গোলাম ছরোয়ার অভিযোগ করেন, পুরো বিষয়টি উল্লেখ করে গত ২৯ এপ্রিল তার স্ত্রী কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ওই থানার ওসি সময়ক্ষেপণ করে তার স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগটি আইনের সুস্পস্ট লংঘন করে ৩০ এপ্রিল মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছেন। এমনকি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ধারা বাদ দিয়ে দায়সারাভাবে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের নিকট আত্মীয় প্রভাবশালী হওয়ায় কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করতে গড়িমসি করছেন।

আগৈলঝাড়া থানা ওসি গোলাম ছরোয়ার অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়েকে মারধর ও শ্লীলতাহানীর ঘটনায় বরিশাল সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর তিনি (প্র্রধান শিক্ষক) অভিযুক্তদের তার অফিসে তলব করেন। ওইসময় উপস্থিত কোতয়ালী মডেল থানার ওসিকে তিনি অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়নি। যা কৌশলে আসামীদের পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করার সামিল।

আগৈলঝাড়া থানার ওসির অভিযোগের বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম বলেন, অভিযোগে যে ধারা কাভার করে সেই ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনাটি অনেক আগের তাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে। তবে অভিযুক্তদের ২৯ এপ্রিল সামনে পেয়েও পুলিশ হেফাজতে না নেওয়ার বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। এর আগে অভিযোগ দাখিলের পর ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন ওসি আজিমুল করিম। তবে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাবার পর মামলা রেকর্ড করা হলেও কি সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে যান ওসি আজিমুল করিম।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত শ‌শী এবং নির্যাতিতা ওই ছাত্রী একই ক্লাশের শিক্ষার্থী। তারা দুইজন নগরীর পেশকার বাড়ি এলাকার এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তো। সম্প্রতি সময়ে প্রাইভেট পড়তে যাবার পথে শশীকে ডাকতে নির্যাতিতা ছাত্রী তার (শশী) বাসায় গেলে তাকে আসাদ ইসলামের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায়। এরপর থেকেই শশী পরিকল্পিতভাবে ওসির মেয়েকে বিভিন্নধরনের কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সম্প্রতি শশী নাটকীয়ভাবে তার মা ফাতেমা খাতুন চম্পার সহযোগীতায় নগরীর কিশোর গ্যাংদের নিয়ে ওসি’র মেয়েকে মারধর করে শ্লীলতাহানী করে।

dailyajkerpaper Copyright © All rights reserved. | This Site Developed by Arifin Riad