
গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি:
টাকার অভাবে অস্ত্রোপচার না করে রোগীকে ফেরত পাঠানোয় কিশোরীর জীবন আজ সংকটাপন্ন। মানবিকতা ও চিকিৎসার শপথকে উপেক্ষা করে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মৌরী ক্লিনিক এমন এক ঘটনা ঘটিয়েছে, যা গোটা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
১৩ বছর বয়সী ফাতেমা আক্তার, উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের মেয়ে। সোমবার (২৩ জুন) হঠাৎ তীব্র পেটব্যথা নিয়ে তাকে মৌরী ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা অ্যাপেন্ডিসাইটিস শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচারের নির্দেশ দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে অপারেশনের আগে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারের কাছে দাবি করে ১০ হাজার টাকা।
রোগীর পরিবার সামর্থ্য অনুযায়ী কিছুটা ছাড় চেয়ে সহযোগিতা চাইলেও, কর্তৃপক্ষ অনড় অবস্থানে থেকে অপারেশন বন্ধ রেখে রোগীকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেয়। ফলে সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় কিশোরীর শারীরিক অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।
ফাতেমার মা রাজিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, একটু ছাড় দিলে মেয়েটার অপারেশন হয়ে যেত। আমরা অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি।
রোগীর পরিবার জানায়, আমরা টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছিলাম। অথচ তারা একটুও সময় দিল না, বরং আমাদের ক্লিনিক থেকে তাড়িয়ে দিল।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে গৌরনদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাজিব হোসেনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলায় ক্লিনিক মালিক মাহমুদ হোসেন মুহিত শরীফকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হলেও জরিমানা পরিশোধ করায় তাকে সতর্ক করে মুক্তি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ক্লিনিক মালিক মাহমুদ হোসেন মুহিত শরীফ বলেন, স্টাফদের একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমি ক্লিনিকের সকল কর্মীকে সতর্ক করে দিয়েছি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাজিব হোসেন বলেন,রোগীর জীবন নিয়ে উদাসীনতা কিংবা বাণিজ্যিক মানসিকতা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলবে।
উল্লেখ ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর শুক্রবার গৌরনদীর মৌরি ক্লিনিকে রক্ত নিতে যায় জাহানারা। সেখানে রক্ত নেওয়ার সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পরে সে। পরবর্তীতে ওই ক্লিনিকে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে তরিঘরি করে রোগীকে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে শেবাচিম হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে আটটার দিকে মারা যায় জাহানারা। সেই ঘটনায়ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছিল।
More Stories
আগৈলঝাড়ায় জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে ৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা
গৌরনদীতে ভাঙা সেতুর ওপর সুপারি গাছ ,জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার সেতু নয়, যেন মরণফাঁদ
আগৈলঝাড়ায় খাবারে বিষ মিশিয়ে অচেতন করে লুটপাটের চেষ্টা ৪ সদস্যের সংঘবদ্ধ চক্র গ্রেপ্তার