নিজস্ব প্রতিবেদনঃ-
দলের নীতি ও আদর্শ ভিন্ন হলেও সরকারী জমি দখল, অবৈধ সাম্রাজ্যে বিস্তার করে উপার্জনের আদর্শে তারা এক ও অভিন্ন। সরকারে খাস খতিয়ানের জমিসহ বাজারের জমি দখল, একাধিক দোকান উত্তোল ও বাজারের রেকর্ডিও ভিটির ভাড়া আদায় করে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও পয়সারহাট বন্দরের কথিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ সিকদার ও তার সহযোগী সাবেক সিইসি বিচারপতি এমএ আজিজের ভাগ্নে স্থানীয় বিএনপি নেতা রুবেল (রুমেন) সিকদারসহ তাদের অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। গত এক যুগ যাবত বাজার কমিটির নামে এই দখলদার বাহিনীর অত্যাচারে নাভিশ্বাস উঠেছে ওই বন্দরের ব্যবসায়িদের। স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় নেতার এহেন কর্মকান্ডে বিব্রত ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাও। অবৈধ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকারী দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে সরকারী ও বাজারের জমি দখল, ঘর উত্তোলন, বাজারের ঘরের ভাড়া তুলে পকেটে ভরাসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আস্বস্ত করার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়িরা।আগৈলঝাড়া উপজেলার পশ্চিম সীমান্তে বাকাল ইউনিয়নের অন্যতম বানিজ্যিক বন্দর পয়সারহাট। নৌ এবং সড়ক পথের এই বন্দরটি ব্যবসা বানিজ্যর জন্য বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয়। বন্দরের মৎস্য ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য সত্তোরোর্ধ আব্দুল হক শেখসহ অনেক ব্যবসায়িরা অভিযোগে বলেন- দীর্ঘদিন যাবত বাজার পরিচালনায় কোন কার্যকরী কমিটি নেই। কমিটি না থাকার সুযোগে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ফিরোজ শিকদার দলের এবং নিজ বংশের প্রভাব খাটিয়ে নিজেকে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীনকে সভাপতি হিসেবে দাবি করে আসছে। বাজারের স্ব-ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক দাবিদার ফিরোজ সিকদার সাবেক সিইসি বিচারপতি এমএ আজিজ এর ভাগ্নে পয়সা গ্রামের মৃত লালমিয়া সিকদারের ছেলে স্থানীয় বিএনপি নেতা রুবেল সিকদারকে নিয়ে সম্প্রতি বন্দরের মধ্যে সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত কোটি টাকা মূল্যের একটি ডোবা বালু ভরাট কাজ শুরু করেছে।
অভিযোগ রয়েছে ফিরোজ সিকদার জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত মার্কেটের সাথে থাকা সরকারী জমিতে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে তিনটি ঘর উত্তোলন করে তাপস কর্মকারসহ তিনজন কর্মকারকে ভাড়া দিয়ে নিজের পকেটে ভরে আসছে বছরের পর বছর।এছাড়াও বাজারের নামে রেকর্ডকৃত তিনটি ভিটি নিজের দখলে রেখে সেখানে নিপুল রায়, মাহাবুব সিকদার ও সামসুল হককে ভাড়া দিয়ে বছরে ৭৩ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করে আত্মসাৎ করে আসছেন তিনি। এক যুগে এই ভাড়ার টাকার পরিমান দাড়িয়েছে ৮লাখ ৭৬হাজার।
বারপাইাক গ্রামে ফার্নিচার ব্যবসায়ি নিপুল রায় জানান, তিনি গত ৬ বছর যাবত বছরে ২৪ হাজার টাকা করে ঘর ভাড়া প্রদান করে আসছেন। তার কাছ থেকে ভাড়ার টাকা নিচ্ছেন ফিরোজ সিকদার ও বর্তমান মেম্বর হেমায়েত সিকদার। অপর দুই ব্যবসায়িও ভাড়া প্রদানে এই দুই জনের কথা জানিয়েছেন।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির আপত্তির মুখেও ফিরোজ সিকদার স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে সখ্যতার কারনে বন্দরের উত্তোলিত খাজনার একটা বড় অংশ বাজারের কাজে ব্যবহার না করে স্থানীয় বিএনপি নেতা হালিম চৌকিদার, রুপ শেখ, রুমেল সিকদারকে নিয়ে ভাগাভাগি করে নিজের অবৈধ সাম্রাজ্যো টিকিয়ে রেখেছে। সুগন্ধ্যা নদীর উপর পয়সা ব্রীজ নির্মান হবার পরে সাবেক খেয়া ঘাটের সরকারীভাবে কোন ইজারা না হলেও ওই খেয়াঘাট নিজের দখলে রেখে সেখান থেকে আসার অর্থের মালিকও ফিরোজ নিজেই।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ফিরোজ সিকদার নামে বে-নামে বন্দরে মহিলা আশ্রয় কেন্দ্রের অর্ধডজন রুম নিজের দখলে রেখেছেন।
আব্দুল হক শেখ আরও অভিযোগে বলেন- স্কুলের সামনের সরকারী জমিতে অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ৭/৮জনে ঘর তুলতে গেলে স্থানীয়দের বাধার মুখে তাদের প্রতিহত করা হয়।
অবৈধ দখল বানিজ্যর সাম্রাজ্য থেকে মুক্তি পেতে ওই ব্যবসায়িরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করে বাজারের রাজস্ব সরকারী কোষাগারে জমা প্রদানসহ অবৈধ স্থপানা উচ্ছেদেরও দাবি জানালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বিষয়টি দেখবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করার কথা জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত ফিরোজ সিকদার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- বাজারের তিনটি ভিটির ভাড়া উঠায় মেম্বর হেমায়েত। হেমায়েত বাজারের ক্যাশিয়ার। বাজারের আয়-ব্যয়ের হিসাব তার কাছে আছে। ব্যয়ের পরে উদ্বৃত্ত অর্থ বাজারের ব্যাংক হিসেবে জমা করা হয়। তার হিসাব তার কাছে আছে। কর্মকারদের কাছে তিনি কোন ভাড়া দেননি জানিয়ে বলেন-তাদের ব্যবসা করার সুযোগ দেয়ার জন্য অস্থায়ীভাবে তিনটি ঘর তুলে দেয়া হয়েছে। বাজারের মধ্যে সরকারী সম্পত্তি দখলের বিষয়ে বলেন কারা সেটা বালু ভরাট করছে তা তিনি জানে না। এই প্রতিনিধির মাধ্যমে ঘটনা জেনে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ খবর নেবেন।
বাকাল ইউপি চেয়ারম্যান বিপুল দাস বলেন- ২০১৩ সালে সর্বশেষ বাজার কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার পর থেকে নতুন কোন পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। বাজারের দেখভাল করার জন্য স্থানীয় ফিরাজ সিকদারকে বলা হলেও অনুষ্ঠানিকভাবে তাকে কোন দ্বায়িত্ব দেয়া হয়নি। অবৈধ দখল, বাজারের আয়-ব্যয় সম্পর্কে চেয়ারম্যানকে কিছু অবহিত করেনি। সরকারী জমি দখলের বিষয়ে তিনি জেনে নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছেন জানিয়ে তিনি বাজারের অবৈধ দখলমুক্ত করে সরকারের রাজস্ব আদায়ের ব্যপারে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন ব্যবসায়ি ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তিনি সরকারী জমি দখলের অভিযোগ শুনেছেন এ বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ রাজীব ইসলাম তারীম ।। মোবাইল : +88 01818052282
© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৪ |